লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার অব্যবহিত পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের ইউনিয়ন বাজেটে কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হওয়ার দরুন ভারতের থিতিয়ে পড়া শেয়ার বাজারের পালে হাওয়া লেগেছে। তরতর করে বেড়েই চলেছে নিফটি। বিনিয়োগকারীদের এখন পোয়াবারো। ফলস্বরূপ বিনিয়োগকারীরা মোটা অংকের রিটার্ন ঘরে তুলছে। সেনসেক্সের সেই ঢেউ এসে লেগেছে ফান্ড হাউস গুলিতে। ঘুমিয়ে পড়া মিউচুয়াল ফান্ড স্কীমগুলি এই তালে আবার জেগে উঠেছে। ঘোলা জলে মাছ ধরতে মাঠে নেমেছে ভারতের ফান্ড হাউসগুলি। গ্রাহকদের কাছে নতুন নতুন স্কিম নিয়ে হাজির হচ্ছে তারা। নতুন ফান্ড লঞ্চের দিক থেকে এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ড, মোতিলাল অসওয়াল, আদিত্য বিড়লা সান লাইফ এইসব ফান্ড হাউসগুলির পর সেই তালিকায় এবার নাম লেখালো ইউনিয়ন মিউচ্যুয়াল ফান্ড। সম্প্রতি নতুন একটি স্কিম ( Union Multi Asset Allocation Fund) নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারীভাবে ঘোষণা করল সংস্থা।
সূত্র অনুযায়ী, নয়া স্কিমটিতে লার্জ ক্যাপ, মিডক্যাপ, স্মলক্যাপ সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করা হবে। তাই ফান্ডের নামকরণ করা হয়েছে মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড (Union Multi Asset Allocation Fund)। যদিও নতুন এই ফান্ডটিতে বিনিয়োগের দরজা এখনো খোলা হয়নি, তবে খবরে প্রকাশ আগস্ট মাসের ২০ তারিখ থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট উইন্ডো খুলে দেওয়া হবে। সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত নিউ ফান্ড অফার বা NFO টিতে সাবস্ক্রিপশন নেওয়ার সুযোগ কার্যকরী থাকবে। তারপর NFO ক্রয় করার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও বন্টনের দিন থেকে শুরু করে ৫ দিন পর থেকে বিনিয়োগকারীরা পুনরায় দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে নতুন এই স্কিমটি(Union Multi Asset Allocation Fund) ক্রয় অথবা বিক্রয় করতে পারবে।
নয়া এই ফান্ডের বিপরীতে বেঞ্চমার্ক হিসাবে রাখা হয়েছে Nifty 50 TRI ; পাশাপাশি ক্রিসিল শর্ট টার্ম বন্ড ফান্ড সূচক ও দেশীয় বাজারে নিত্যদিনের সোনার সূচকও বেঞ্চমার্ক হিসাবে থাকছে। তবে নিফটি সূচকের ৬৫ শতাংশ, ক্রিজিল (CRISIL) বন্ড ইনডেক্সের ২০ শতাংশ ও গোল্ড সূচকের ১৫ শতাংশ নিয়ে ফান্ডটি গঠন করা হবে। প্রসঙ্গত, ইউনিট অ্যালটমেন্টের পর ১৫ দিনের মধ্যে রিডেম্পশন নিলে অথবা স্যুইচ অফ করলে ১ শতাংশ একজিট লোড কেটে নেওয়া হবে। তবে ১৫ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে কোনরকম এক্সিট লোড কার্যকরী থাকবে না।
উল্লেখ্য, স্কিমটিতে অর্থ বিনিয়োগ করতে হলে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে এককালীন বিনিয়োগ করলে ন্যূনতম ১০০০ টাকা এবং পরবর্তী পর্যায়ে ১ টাকার গুণিতকের হারে অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকবে। তবে যদি SIP অথবা Systematic Investment Plan বিকল্প বেছে নেওয়া হয় তাহলে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েই স্কিমটিতে নাম লেখানো যাবে। এরপর ১ টাকার গুণিতকে টাকা জমা করলেই চলবে। এক্ষেত্রে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।মূলধন বন্টন প্রসঙ্গে ফান্ড হাউসের তরফে জানানো হয়েছে Union Multi Asset Allocation Fund টিতে মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা ইক্যুইটি অথবা ইক্যুইটি সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্ট গুলিতে বরাদ্দ করা হবে। বাকী ১০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ ডেট এবং মানি মার্কেট মাধ্যমগুলিতে লাগানো হবে। পাশাপাশি ১০ থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ সোনা এবং ০ থেকে ১০ শতাংশ অর্থ রুপোর উপর গঠিত ইটিএফ ফান্ডগুলিতে বিনিয়োগ করা হবে। এর বাইরে ০ থেকে ১০ শতাংশ টাকা রিয়েল এস্টেট ইনভেসমেন্ট ট্রাস্ট বা REITs এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেসমেন্ট ট্রাস্ট বা InviTs নামক বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলিতে ঢালা হতে পারে।
নতুন ফান্ড লঞ্চ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুখ্য কার্যকরী আধিকারিক (CEO ) মধু নাইয়ার জানিয়েছেন “আমাদের সংস্থা নতুন যে ফান্ডটির (Union Multi Asset Allocation Fund) উন্মোচন করতে চলেছে সেটি হবে একটি বহুমুখী(Diversified) বিনিয়োগের মাধ্যম। বিশেষ করে বর্তমানের এই দোলাচলের বাজারে সুরক্ষিত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগ করে যাতে করে বিনিয়োগকারীরা তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারে”। পাশাপাশি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত ফান্ডহাউস সংস্থা জানিয়েছে ” আমাদের নতুন এই ফান্ডটি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে যখন ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে। লোকসভা ভোটের ফলাফল এবং বাজেট ঘোষণা বাজারের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে। আবার পরিসংখ্যানগত দিক থেকে গত এক দশকে ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প যথেষ্ট অগ্রগতির মুখ দেখেছে। আগামীদিনেও অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী “
পরিশেষে বলা যায়, নতুন এই মিউচ্যুয়াল ফান্ড স্কিমটি(Union Multi Asset Allocation Fund) সেই সমস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য বিকল্প হতে পারে যারা ইক্যুইটি এবং ইক্যুইটি সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্ট সহ ডেট, মানি মার্কেট ও সোনা রুপো এইসব খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে অর্থ সম্পদ সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক। পাশাপাশি ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব সুদক্ষ ফান্ড ম্যানেজারের হাতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হয় না। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে একজন ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি বিনিয়োগকারী হিসাবে পকেটে সামান্য কিছু অর্থ নিয়েই প্রকল্পটিতে নাম লেখানো যেতেই পারে।